Sunday, 8 March 2020

break up love story

রুমে ঢুকে দেখলাম, ইশিতা বসে আছে। ভেবেছিলাম, ইশিতা হয়ত ঘোমটা টেনে বসে
থাকবে। কিন্তু তার উল্টো। ফোনে কথা বলে তাকে লাজুক মনে হয়েছে। হয়ত গরমের
কারনে ঘোমটা সরিয়ে রেখেছে।
.
আমাকে দেখে ঘোমটা দিয়ে মুখ ঢাকল। এতক্ষণ হয়ত আমার অপেক্ষায় বসেছিল। আমি
রুমে ঢুকে তারপাশে বসলাম। এই মেয়েটা আমার বউ। কিন্তু নামটাই শুধু জানি।
.
হঠাৎ করেই যেন বিয়ে হয়ে গেল। তাই মেয়েটার নাম জানা ছাড়া আর কিছুই সম্ভব
হয়নি। বিয়ে পড়ানোর সময় নামটা জেনেছি। প্রেম না করে বিয়ে করার মজাটা যেন এখানেই...।
.
.
বিয়ের জন্য সবকিছু আগে থেকেই কেনা হয়ে গিয়েছিল। পুরোটাই যে, পূর্ব পরিকল্পিত সেটা খুব ভালভাবেই বুঝতে পেরেছিলাম। তাই কিছু না বলে বিয়ের জন্য প্রাস্তুতি নিয়ে নিলাম। ফুটবল খেলা দেখার মতো বিয়েতে আমার টানটান উত্তেজনায় মনটা প্রফুল্ল ছিল ।
.
ভেবেছিলাম বিয়ে রেজিস্ট্রি করে রেখে দিবে। ওমা এ কি দেখছি! এ মেয়ে তো আমাদের সাথেই গাড়িতে উঠে বসলো । সবকিছু খুব তাড়াতাড়ি হয়ে গেল।
.
.
বাসর রাতে......
--আপনি আলাদা বিছানায় ঘুমাবেন। আমি আপনার পাশে থাকব না।
.
ঘরটা ভাল করে দেখছিলাম। এত তাড়াতাড়ি বাসর ঘর সাজানো হয়ে গিয়েছে! ইশিতার
কথা শুনে চমকে গেলাম। বিয়ের প্রথম রাতে বউ এর কাছে এমন কথা শুনলে অবাক হওয়া স্বাভাবিক।
.
আমি আলাদা ঘুমাবো মানে কি! এই বিয়েতে কি মেয়ের মত নেই! তাহলে জোর করে বিয়ে দিয়েছে! নাকি মেয়ের অন্য কারো সাথে সম্পর্ক আছে! সেই প্রেমিক মেয়েটিকে বলে দিয়েছে "তোমার শরীর আমি ছাড়া কেউ স্পর্শ করবে না"!
.
শেষে এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করতে হল! এমন মেয়ে বলেই কি তাড়াতাড়ি এভাবে
বিয়ে দিয়ে দিল। ভাবতে ভাবতে পাগল হয়ে যাচ্ছি। অদ্ভুত ভাবনা গুলো যেন বুকের মধ্যে আঘাত করছে...।।
.
.
মেয়েটি আমার চিন্তিত মুখের দিকে তাকিয়ে বলল....
.
-আমি ঘুমানোর সময় পাশের জনের গায়ের উপর পা তুলে দেই। তাই বললাম আর কি!
.
মেয়েটির কথা শুনে সস্তি ফিরে পেলাম। তার মানে মেয়েটির অমতে বিয়ে হয়নি। আর
তার কোন প্রেমিক নেই। শুধু শুধু মেয়েটিকে উল্টাপাল্টা ভাবছিলাম।
.
আমি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললাম...
.
-সমস্যা নেই। আমার অভ্যাস আছে।
-আগেও আপনি বিয়ে করেছিলেন নাকি! যে এইরকম অভ্যাস আছে।
-আরে না। আমি কলেজে পড়ার সময় কয়েকজন বন্ধুদের সাথে মেসে থাকতাম। তখন এভাবেই থাকতে হত।
.
মেয়েটি আমার কথা শুনে মুচকি মুচকি হাসছে। তার মুখের মাঝে দুষ্টমি ভরা হাসি।
মেয়েটির হাসির মাঝে একটা ব্যাপকতা আছে। যে কারো মন জয় করে নিতে এই হাসিটাই যথেষ্ট।
.
-আপনি বসুন। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। আমি সাজানো বিছানায় বসে থাকলাম।
ইশিতা চেঞ্জ করার জন্য ওয়াশরুমে গেল। প্রথমে মেয়েটিকে যতটা বোকা মনে করেছিলাম, এখন ততটা চঞ্চল মনে হচ্ছে । তবে কথা বলার ধরন সহজ সরল।
.
-আপনি চেঞ্জ করবেন না..?
.
ইশিতা ওয়াশরুম থেকে বের হতেই আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি। এখন মুখে কোন মেকাপ নেই। মুখটা অপরুপ সুন্দর লাগছে। মেকাপ ছাড়ায় মেয়েদের অসম্ভব সুন্দর লাগে। কিন্তু এখনকার মেয়েরা তা বুঝে না। আটা, ময়দা,সুজি নাম না জানা আরও কত যে আইটেম আছে, আল্লাহই জানে ।
.
আমার তো এখন ঈশিতার দিকে শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করছে। আমি তার দিকে তাকিয়েই বললাম....
---হ্যা,যাচ্ছি।
.
-শুনুন। রাতে আমি একা একা ঘুমাতে পারি না। পাশের জনকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাই।
ইশিতার মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললাম। এই মেয়ে বলে কি! এত বড় মেয়ে কি তাহলে একা একা ঘুমাতে পারেনা...!!!
.
-বাসায় কিভাবে ঘুমাতেন...?
আমার কথা শুনে হেসে বলল
-বাসায় আমার বি এফ ছিল। তাকেই জড়িয়ে ঘুমাতাম।
বি এফ ছিল মানে! শুনেই চমকে গেলাম। এই মেয়ে বলে কি! রাতে বি এফ কে জড়িয়ে
ধরে ঘুমাত!
.
-আমার বি এফ এর ছবি দেখবেন....?
ইশিতা দুষ্টমি ভরা হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বি এফ এর কথা বলার সময়
মেয়েরা হাসিমুখে বলে। এই মেয়ে ব্যাতিক্রম হবে কেন!
.
-এখন ফ্রেশ হয়ে আসুন। তারপরে ছবি দেখাব।
.
আমি ওয়াশরুমে ঢুকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। ইশিতার বি এফ চেয়ে আমি কি খুব সুন্দর! সুন্দর বলেই কি বি এফ ছেড়ে আমাকে বিয়ে করল। নাকি আমি প্রতিষ্ঠিত বলে। ভাবতে ভাবতে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।
.
ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখলাম ইশিতা মুচকি হাসছে। আমি মুখে পানি দিলেও মুখ
শুকিয়ে আছে। বউ এর বি এফ এর গল্প শুনলে যে কারো মুখ শুকনা হয়ে যাওয়ার কথা।
.
-এই দেখুন আমার বি এফ ছবি।
.
ইশিতার মোবাইলের দিকে তাকিয়ে হো হো করে হেসে উঠলাম। ইশিতার মোবাইলে একটা টেডিবিয়ারের ছবি। এটাই নাকি ওর বি এফ! আমার হাসি দেখে ইশিতাও হাসতে হাসতে বলল....
-এটাই আমার বি এফ। মানে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। প্রতিদিন রাতে একে জড়িয়ে ধরে ঘুমাই।
.
ইশিতাকে দেখে মনে হয় না যে সে দুষ্টু টাইপের...।
সুন্দরি মেয়ে একটু দুষ্টু হতেও পারে। ইশিতা আমার সামনে এসে বসল। আমি ওর মুখের
দিকে তাকিয়ে আছি। ইশিতা বলল...
.
-শুনুন। আমার অনেকদিনের শখ বিয়ে করে বরের সাথে প্রেম করব। আমি আপনার সাথে প্রেম করতে চাই করবেন...?
.
আমি চুপ করে বসে আছি। নতুন বউ এর কাছ থেকে এমন প্রস্তাব পেয়ে অবাক হওয়ার
কথা। আমি সিগারেটের প্যাকেট থেকে সিগারেট বের করে মুখে লাগালাম। ইশিতার
দিকে তাকিয়ে বললাম....
-হ্যা প্রেম করব।
ইশিতা আমাকে অবাক করে দিয়ে মুখ থেকে
সিগারেট কেড়ে নিয়ে বলল....
.
-সিগারেট খাওয়া চলবে না। আগে যা করার করেছো । আজ থেকে সিগারেট বাদ। নাহলে
কিন্তু ব্রেকাপ।
.
ইশিতার কথামত সিগারেট খাওয়া বাদ দিলাম। নতুন প্রেমিকার কথা শুনতেই হবে।
নাহলে আবার সমস্যা। ইশিতা বলল....
.
-এখন আমরা বাইরে বসে চাঁদ দেখব। চলো।
-এত রাতে বাইরে!
-তো কি হয়েছে! আমি বলেছি তুমি যাবে।
-তাই বলে....
-কোন কথা না। বেশি কথা বললে ব্রেকাপ।
.
আমি ইশিতার দিকে তাকিয়ে বললাম
-চলুন।
ইশিতা এবারে রাগ দেখিয়ে বলল
-প্রেমিকা কে কেউ আপনি বলে! তুমি করে বলো।
-আচ্ছা।
-হাত ধর। দুরে দুরে থাকবে না।
.
ইশিতা আর আমি বাসার ছাদে বসে চাঁদ দেখছি।
চাঁদের আলোটা আজ বেশ ছড়িয়ে পড়েছে । দিগন্ত জোড়া মায়াবী আলো ইশিতার মুখে এসে পড়ছে । সে আলোয় ইশিতাকে আরও মায়াবীনি লাগছে...। অদ্ভুত সে মায়া যাকে বুকের প্রকোষ্ঠে আলতো আদরে পুষে রাখতেই যেন ভালো লাগে...।
.
ইশিতার কথাগুলো শুনছি । কথাগুলো যেন তার দুষ্টুমিষ্টি হাসিটাকে আড়াল করে রাখছে...। নিজে কোন কথা না বলে তার কথাগুলো শুনে যাচ্ছি । কথা সুনবোই বা না কেন, কথা না শুনলেই নাকি ব্রেকাপ...........!!!!

No comments:

Post a Comment

soumitramanna881@gmail.

Popular Feed

Recent Story

Featured News

Back To Top